শহীদ মিনারে অবস্থান শিক্ষার্থীদের
মেডিকেলে ভর্তিতে কোটা বাতিলেও দাবি
- আপলোড সময় : ২১-০১-২০২৫ ০৫:১০:২৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২১-০১-২০২৫ ০৫:১০:২৬ অপরাহ্ন
ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ বা ৪১ পেয়ে অনেকে চান্স পেয়েছে অথচ এর ডাবল মার্ক পেয়েও অনেকে চান্স পায়নি, এটা কি বৈষম্য না?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
মেডিকেল ও ডেন্টার কলেজে মুক্তিযোদ্ধাসহ সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছে ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তারা গতকাল সোমবারের মধ্যে মেডিকেল কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল পুনঃপ্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। এ সময় মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সংহতি প্রকাশ করেছেন।
শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ’আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘মেডিকেলে কোটা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘৪০ পেয়ে চান্স হয়, ৭৩ কেন বাদ হয়’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’সহ নানা স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক আব্দুল ওহাব বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ বা ৪১ পেয়ে অনেকে চান্স পেয়েছে অথচ এর ডাবল মার্ক পেয়েও অনেকে চান্স পায়নি, এটা কি বৈষম্য না?
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা যেহেতু রাজপথে নামতে শিখেছ সেহেতু রাজপথ থেকেই তোমাকে অধিকার আদায় করে নিতে হবে। এছাড়াও আজকের মধ্যে সকল ধরনের কোটার বিলুপ্তি ও ফলফল পুনঃপ্রকাশ করতে হবে। আমি শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্বতা প্রকাশ করছি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী দোহা বলেন, বৈষম্য বাতিল বাতিল চেয়ে কোটার সংস্কার চেয়ে একটি সফল আন্দোলনের পরেও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণের কোনো দরকারই ছিল না।
যেখানে পাশ নম্বরই ৪০ সেখানে ৩৭ বা ৩৮ পেয়ে কীভাবে কেউ মেডিকেলে পড়তে পারে। আমরা আজকের মধ্যে এই বৈষম্যের সমাপ্তি দেখতে চাই।
কোটা বহাল রেখে ফলাফল প্রকাশের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আবির হোসেন।
তিনি বলেন, এই বছর নাতি-নাতনি কোটায় কাট মার্কের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ নম্বর কম পেয়েও সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়েছে যা আমরা মেনে নিতে পারি না আর মানবোও না। আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সকল ধরনের কোটার বিলুপ্তি চাই। আজকের মধ্যে কোটা বৈষম্য বাতিল করে পূণরায় ফলাফল প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।
মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার।
তিনি বলেন, গণঅভ্যূত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি মেডিকেলে অযৌক্তিক বৈষম্যমূলক কোটা চালু রয়েছে। অনেকে ৭২ নম্বর পেয়েও চান্স পায়নি অথচ অনেকে ৪০ পেয়েও চান্স পেয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও পোষ্য কোটাসহ অযৌক্তিক কিছু কোটা রয়ে গিয়েছে। আমরা চাই অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পুনঃপ্রকাশ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিম উদ্দীন হলের শিক্ষার্থী নুরুল গণি সগীর বলেছেন, ফের বৈষম্যমূলক নীতির ‘বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছেন’ তিনি।
এই শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই নেতা অন্তর্বর্তী সরকারে দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের ডাকে আমাদের হাজার হাজার ভাই আহত ও নিহত হয়েছে। তাদের যে দাবি ছিল সেই দাবি পুরণ করতেই আপনাদেরকে আমরা উপদেষ্টা বানিয়েছি আপনারা যদি সেই শিক্ষার্থীদের ভাষা না বুঝেন তাহলে আপনাদের সেখানে থাকার দরকার নেই।
মেডিকেল কলেজের এবারের প্রকাশিত ফলে ৩৭টি সরকারি কলেজের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৭২ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাহ হোসেনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর, এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান পরীক্ষার জিপিএ থেকে পাওয়া নম্বর এবং ভর্তি পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে পাঁচ হাজার ৩৭২ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
এ বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে এক লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৫ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন এক লাখ ৩১ হাজার ৭২৯ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৬০ হাজার ৯৫ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। পরীক্ষায় পাস নম্বর ছিল ৪০।
সেই হিসাবে এ বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। তাদের মধ্যে ছাত্রী ৩৭ হাজার ৯৩৬ জন, যা মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর ছাত্র ২২ হাজার ১৫৯ জন, যা মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর ৩৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
ভর্তি পরীক্ষায় একজন সর্বোচ্চ ৯০ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ জানিয়েছে, সরকারি মেডিকেল কলেজে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময়সীমা আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
আর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির অনলাইন আবেদন গ্রহণের বিজ্ঞপ্তি আগামী ২৩ জানুয়ারি প্রকাশ হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ।
শুক্রবার সারাদেশের ১৯ কেন্দ্রের ৫৩টি ভেন্যুতে এক যোগে অনুষ্ঠিত হয় এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা।
দেশের সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০টি। আর বেসরকারি ৬৭টি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ২৯৩টি আসন রয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ